স্কুল পরিচিতি

শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। ১৯৪৭ সালের পর ঢাকায় কার্যক্রম শুরুর সময়কাল থেকেই আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শিক্ষা কার্যক্রম গেন্ডারিয়ায় চলমান ছিল। ছেলে ও মেয়েদের জন্য স্বতন্ত্র উর্দু ও বাংলা মিডিয়াম স্কুল পরিচালিত হত। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় স্কুল দুটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্র্তীতে ১৯৭৭ সনে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শিক্ষা কার্যক্রম নতুন উদ্যোগে শুরু হয়। কালের গণনায়  দীর্ঘ সময়কাল পেরিয়ে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে সামাজিক ব্যবস্থার। মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে অনেক। শিক্ষা যেমন মানুষের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করে, তেমনি শিক্ষা নতুন নতুন জ্ঞান চর্চার সাথে পরিচিতি করে। এটি বহমান ¯্রােতের মতো। এ ¯্রােতধারায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের শিক্ষা কার্যক্রমের ও ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। 
সম্প্রসারিত হয়েছে শিক্ষা কর্মসূচীর নানা শাখা-প্রশাখার। যুগের চাহিদা মিটাতে সরকারী উদ্যোগে  কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ হয়েছে দেশব্যাপী। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম সমকালীন প্রয়োজন বিবেচনায় বর্তমানে সাধারণ ও কারিগরি শিক্ষা ধারার বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। প্রাথমিক থেকে এর উত্তরণ ঘটেছে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত, যদিও ভিন্ন মাত্রায়। নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আরো একধাপ এগিয়ে পলিটেকনিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৪৯ সনের শেষভাগে শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আঞ্জুমানের নিয়ন্ত্রনাধীন বালক ও বালিকাদের জন্য পৃথক শিফটে ২টি হাই স্কুল চালু হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় স্কুল দুটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৭ সন থেকে ঐ স্থানেই পুনরায় ‘‘আঞ্জুমান জামিলুর রহমান ইসলামিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়’’ রূপে কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৯৬ সনের ১লা জানুয়ারি বিদ্যালয়টিকে জুনিয়র গার্লস স্কুলে উন্নীত করা হয়। ক্ষমরহুম খান বাহাদুর ফজলুর রহমান ও বেগম আজিজুন্নেসা সুফিয়া খাতুনের একমাত্র পুত্র জনাব মরহুম জামিলুর রহমান সাহেবের অকাল মৃত্যুর পর তাঁর অন্তিম ইচ্ছানুসারে  কাকরাইলে অত্যন্ত মূল্যবান ৩০কাঠা সম্পত্তি আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে দান করেন। জনাব জামিলুর রহমান সাহেবের স্মৃতি রক্ষার্থে বিদ্যালয়টি নামকরণ করা হয়। পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ এবং ১টি অফিসকক্ষ নিয়ে বিদ্যালয়টি ছিল একতলা ভবন। ১৯৯৮ সালে জুনিয়র শাখায় ছাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধিও কারণে সেসময় দ্বিতীয় তলা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম প্রায় নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে দ্বিতীয় তলায় হলরুমের ব্যবস্থা রেখে চারটি শ্রেণিকক্ষ, একটি প্রধান শিক্ষকের কক্ষ এবং কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ করেন। বিদ্যালয়ে ছাত্র –ছাত্রী বৃদ্ধি ও ভোকেশনাল স্কুলের জেনারেল ক্লাস কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ২০০৯ সালে তৃতীয়তলা  ও উত্তরাংশের খালি জমিতে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৃতীয়তলা ও টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১২টি শ্রেণি কক্ষ, ১টি কম্পিউটার ল্যাব, ১টি বিজ্ঞানাগার, ১টি পাঠাগার, ২টি শিক্ষক কমনরুম, ১টি প্রধান শিক্ষকের অফিস, ১টি অফিস সহকারীর অফিস, ১টি জেনারেটরের কক্ষ, ১৫টি টয়লেট, ১টি ষ্টোররুম, ১টি কিচেন এবং ১টি ছোট খেলার মাঠ রয়েছে।   বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে।

 

আমাদের লক্ষ্য

শুরু থেকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়ন, যুগোপযোগী ও উন্নতমানের শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। বিদ্যালয়ে ২০১০ সন থেকে থেকে অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্বারা হাতে কলমে কম্পিউটার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। সমাজের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বিদ্যালয়টির পরিচালনা পরিষদে রয়েছেন। এলাকার দরিদ্র, এতিম ও সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা এখানে বিনা বেতনে অথবা স্বল্প বেতনে পড়াশুনার  করার সুযোগ পেয়ে আসছিল। বর্তমানে শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সকল দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের বিনা বেতনে  পড়াশুনা করছে। 
প্রতিষ্ঠার পর থেকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম ট্রাস্ট কর্তৃক বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা কমিটির তত্ত¦াবধানে শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবক ও দাতাদের সার্বিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়ন অক্লান্ত পরিশ্রম ও আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। যাদের জন্য এ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত তাদের মূল অংশ আঞ্জুমান এতিম খানায় লালিত পালিত অসহায় এতিম ও দু:স্থ সন্তানেরা। বেঁচে থাকা যাদের কাছে মূখ্য, আনুষ্ঠানিক শিক্ষা তাদের কাছে এক সোনার হরিণ।  এদেশে বিত্তবানদের শিক্ষা নিয়ে যত ভবনা রয়েছে, হতদরিদ্রদের নিয়েও সে চিন্তা ভাবনা কেবল কর্মসূচীর মধ্যে সীমাবদ্ধ। ফলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, কিংবা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সরকারীভাবে অথবা বেসরকারীভাবে নানা পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিয়েও  ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। শিক্ষা বঞ্চিত কিংবা শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়া এতিম ও দু:স্থদের আতœকর্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াসেই আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের এ শিক্ষা কার্যক্রম। দেশে বহু এন জি ও রয়েছে যারা  এই সুবিধাবঞ্চিতদের দারিদ্র বিমোচনের নামে নানা কর্মসূচী নিয়েছে এর প্রচার ব্যাপক। কিন্তু আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের প্রচার বিমূখতা রয়েছে। প্রচারের চেয়ে কর্মসূচী বাস্তবায়ন আঞ্জুমানের মূখ্য বিষয় । কারণ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কোন বিদেশী অর্থায়নে পরিচালিত হয় না। অত্যন্ত নীরবে জনগণের দানের টাকায় হত দরিদ্রদের সত্যিকার অর্থেই আতœকর্মনির্ভরশীল মানব সম্পদে উন্নতি করা তথা কর্মজীবি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে আঞ্জুমান কাজ করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাটিক, বøক, কনফেকশনারী, মোম, কাগজের কারুশিল্প, রান্নার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
যাদের প্রেরণা ও উৎসাহ না পেলে একাজ সম্ভব হতো না, তাদের মধ্যে সবার কাছে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব মাননীয় সভাপতি জনাব এ.বি.এম.জি কিবরিয়া। অত্র এলাকার হত দরিদ্র, দুস্থ এবং সুুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অর্থের অভাবে দরিদ্র শিশুদের পড়াশুনা যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, সেই লক্ষ্যে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম এই এলাকার স্কুলটি গড়ে তুলেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের এই যুগে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। আমরা চাই আমাদের শিশুদের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাদান করে গড়ে তুলতে। সেই লক্ষ্যে আমরা  শিক্ষার্থীদেরকে কম্পিউটার এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করছি। পড়াশুনা শেষ করে কাউকে যেন পরপমুখাপেক্ষী না হতে হয় সেই প্রচেষ্টা আমাদের । 
ছেলে-মেয়েদের জন্য জুনিয়র হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা আঞ্জুমান পরিচালিত কর্মসূচীর সাথে মানব সম্পদ  উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের জন কল্যাণমুখী ও সেবাধর্মী বহুবিধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তেরোটি নিবার্চিত কমিটি রয়েছে। শিক্ষা কমিটি এ সকল কমিটির মধ্যে অন্যতম । আঞ্জুমানের শিক্ষা পরিচালনার দায়িত্বভার  কমিটির উপর ন্যস্ত। আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নির্বাহী পরিষদের সদস্য সমন্বয়ে শিক্ষা কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটি শিক্ষা উন্নয়ন, পরিকল্পনা গ্রহণ, পরিচালন ও এর বিস্তারের লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর লক্ষ্য ছাত্র ছাত্যীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নে যুগোপযোগী শিক্ষা দান এবং আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান নির্ভর শিক্ষার মাধ্যমে দরিদ্র মেধাবী ছাত্র ছাত্রীদের আতœকর্মনির্ভরশীল মানব সম্পদে উন্নয়ন। আঞ্জুমানের অন্যান্য সকল কার্যক্রমের ন্যায় শিক্ষা কর্মসূচীর সমস্ত ব্যয় জনগনের দানের টাকায় নির্বাহ করা হয়।

শিক্ষা কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
* এতিম, দুস্থ, অসহায ও সুবিধাবঞ্চিতদের সন্তানদের আতœকর্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা।
* আর্ত- মানবতার সেবাদানে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালনে দায়িত্বশীল নাগরিক গড়ে তোলা।
* আঞ্জুমানকে সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত করা।
*গরীব, দুস্থ, অসহায়, এতিম ও সুবিধাবঞ্চিতদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিকরণ।
* গুনগত শিক্ষাদানের মাধ্যমে কর্মমুখী জনশক্তি গড়ে তোলা।
* প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা।
* এতিম,দুস্থদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষার পথ উন্মোচন করা।
* দেশের বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠী দারিদ্র বিমোচন কার্যক্রমে ভ‚মিকা রাখা।
* সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে প্রধান ধারা বিবেচনা করা।
* ধর্মীয় আচারণ ও বিধিমালার বিষয়ে শিক্ষা দান ও সচেতন করে তোলা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের
   মানবিক ও গুনাবলীর বিকাশ ঘটিয়ে আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা।

To Top ↑